ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার
১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম
(গত দিনের পর) ইসলামের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম দুই পর্যায়ে বিন্যস্ত। (ক) মানসিক ও নৈতিক, (খ) বিচারিক মানুষ মূলত পার্থিব সম্পদের মোহে দুর্নীতির পথে ধাবিত হয়। তাই দুর্নীতি দমনে প্রথম পর্যায়ে ইসলামী কর্মধারার লক্ষ্য হলো, প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়কে দুর্নীতিবিরোধী প্রেরণায় উজ্জীবিত করে তোলা এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। সে লক্ষ্যে সম্পদ ও ঔশ্বর্যের কুফল, হারাম উপার্জনের ভয়াবহ পরিণতির কথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কোরো না। আর মানুষের ধন-সম্পদের কিছু অংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকের সমীপে নিয়ে যেয়ো না, তোমরা তো (এর পরিণতি সম্পর্কে) জানো।’ (সুরা আল বাকারা : ১৮৮)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘ওই শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম রিজিক দ্বারা প্রতিপালন করা হয়েছে।’ (তিরমিজি) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘তোমরা ঘর-বাড়ি নির্মাণে হারাম থেকে আত্মরক্ষা করো। কেননা এটি ধ্বংসের মূল।’ (মিশকাত, বায়হাকি-শুআবুল ইমান)। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানোর সময় বলেন, ‘তুমি বিলাসী জীবনযাপন পরিহার করবে। কেননা আল্লাহর প্রিয় বান্দারা বিলাসী জীবনযাপন করে না’।’ (মুসনাদে আহমাদ) হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দোয়া করতে গিয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে মিসকিন অবস্থায় জীবিত রেখো এবং আমাকে মিসকিন অবস্থায় মৃত্যু দান করো আর আমাকে মিসকিনদের দলর্ভুক্ত করে কিয়ামতের দিন উঠিয়ো।’ তখন হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কেন?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘কেননা মিসকিনরা ধনীদের চেয়ে চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, বায়হাকি-শুআবুল ইমান)।
মানবসমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ইসলাম দিয়েছে অত্যন্ত কঠোর দ-ের বিধান এবং তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির ধরন, প্রকৃতি ও গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে ইসলামী আইনে দ- নির্ধারিত হয়ে থাকে। সে মতে, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- থেকে বিভিন্ন মেয়াদের জেল বা জরিমানা যেকোনোটাই হতে পারে। ইসলামী আদালতের বিচারকের পক্ষে প্রভাবিত হয়ে দ-যোগ্য অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া বা অপরাধীর পক্ষে প্রভাব-প্রতিপত্তি বা অর্থের জোরে শাস্তি থেকে বেঁচে যাওয়া-কোনোটাই সম্ভব নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিচারক তিন ধরনের, দুইজন যাবে জাহান্নামে, আরেকজন যাবে জান্নাতে। যে সত্য অবগত হয়ে সে অনুযায়ী হক ফয়সালা করে, সে প্রবেশ করবে জান্নাতে। আর যে সত্য না জানার পরও মিথ্যা ফয়সালা করে জাহান্নামে যাবে এবং যে জেনে-ঝুঝে অন্যায় ফয়সালা দান করে, সেও যাবে জাহান্নামে। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।
হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর খিলাফতকাল ছিল দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ইসলামী ব্যবস্থাপনার বাস্তব উদাহরণ। তিনি যোগ্যতর ব্যক্তিদের প্রজাতন্ত্রের পদগুলোতে নিয়োগ দান করতেন। তাদের জন্য উপযুক্ত বেতন নির্ধারণ করে দিতেন, তাদের সম্পদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন এবং চৌকস গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োগ করেছিলেন, যাতে কোনো সরকারি কর্মচারী দুর্নীতিপরায়ণ হতে না পারে। তার পরও যদি কারো দুর্নীতি প্রমাণিত হতো, তাহলে তার ওপর কঠিন শাস্তি কার্যকর করা হতো। একবার হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে মিসরের এক পদস্থ কর্মকর্তা ‘আয়াজ ইবনে গানাম’-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে তিনি তৎক্ষণাৎ মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাকে মিসরে প্রেরণ করেন এবং তাঁকে বলে দেন, আয়াজকে যে অবস্থায় পাবে ওই অবস্থায়ই মদিনায় নিয়ে আসবে।’
মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা গিয়ে দেখতে পান, অভিযোগ সঠিক। আয়াজের শরীরে মসৃণ পোশাক শোভা পাচ্ছে এবং তাঁর গৃহদ্বার দারোয়ান পাহারা দিচ্ছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা তাঁকে ঠিক ওই পোশাকেই খলিফার নির্দেশ অনুযায়ী মদিনায় নিয়ে আসেন। হজরত ওমর (রা.) নিজ হাতে তাঁর শরীরের মসৃণ পোশাক খুলে ফেলেন এবং তাঁকে মোটা পশমি জামা পরিয়ে দেন। অত:পর একপাল ছাগল নিয়ে আসার নির্দেশ দেন, তারপর আয়াজকে বলেন, যাও এবার গিয়ে এগুলো চড়াও। (আল-ফারুক)।
দুর্নীতি মানবচরিত্রের সহজাত প্রবৃত্তি, তাই পৃথিবীতে মানুষ যত দিন থাকবে, দুর্নীতিও তত দিন থাকবে। সমাজকে সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিমুক্ত করা আদৌ সম্ভব না হলেও তা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সেটি একমাত্র ইসলামী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই সম্ভব। যেমন হয়েছিল রাসুলে কারিম (সা.)-এর যুগে ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে। পরকালে জবাবদিহির ভয় মানুষের মনে যত বেশি কাজ করবে, সমাজের দুর্নীতিও তত কমে আসবে।তাই অনিয়ম দূর্নীতি যেই করুক, প্রশ্ন তুলতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারিবারিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধের চর্চাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শের চর্চার মাধ্যমেই দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ছাগলনাইয়ায় কোরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী আলোচনার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হলো গায়ে হলুদ
সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে সচেতনতামূলক সভা
শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে হলে খেলাধুলার বিকল্প নেই: এডিসি লুৎফুন নাহার
হাইওয়ে পুলিশের সার্বিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য কতটা প্রকট: সাধারণের অবস্থান কোথায়
কোরআন তেলাওয়াত আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি দান করে: কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ
ড. ইউনূসের ৫ মামলা বাতিলের রায়ে আইনি দুর্বলতা পাননি আপিল বিভাগ
শেরপুরে জামায়াতের দিনব্যাপী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত
চুয়াডাঙ্গা শহরের জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান থেকে হাত-পা মুখ বাঁধা অবস্থায় এক অচেতন সেনা সদস্য উদ্ধার
আফগানিস্তানে এবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের
মাওলানা মামুনুল হক আমির জালালুদ্দীন মহাসচিব নির্বাচিত
বসুন্ধরায় ফ্যাশন ব্রান্ড ‘হিজাবিয়ানা’র আউটলেট উদ্বোধন
‘সরকার এতই যোগ্য যে, থানা থেকে ওসি পালিয়ে যায় কিন্তু টেরই পায় না’: মাহমুদুর রহমান মান্না
সাংবাদিকতা হতে হবে পুরো সত্য, আংশিক নয়: কাদের গনি চৌধুরী
জিয়া পরিবারের জন্য বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকে আছে - যুবদল নেতা রেজাউল কবীর পল
বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট
কুষ্টিয়ায় ৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত, আহত-৩
তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
২০২৪ সালে সড়কে নিহত ৭ হাজারের বেশি, দায় নিলেন সড়ক উপদেষ্টা
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে